SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ | NCTB BOOK

এই অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবে-

  • পদার্থের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য
  • বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে পদার্থের শ্রেণিবিভাগ ধাতু ও অধাতু ব্যবহার এবং কৌশল
  • ধাতু এবং অধাতুর ব্যবহার, সতর্কতা এবং সংরক্ষণ কৌশল 
  • পরীক্ষার সাহায্যে তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহিতা পরিমাপ
  • পরীক্ষার সাহায্যে শরন এবং স্ফুটনাঙ্ক নির্ণ
  • ধাতু ও অধাতুর আকার বিকৃতি
  • শীতলীকরন (Cooling)
  • পরীক্ষামূলক কাজের সময় নিরাপত্তা এবং সতর্কতা

 

পদার্থের বৈশিষ্ট্যসমূহ 


তোমরা আগেই জেনেছ যে পদার্থ স্থান দখল করে ও তার ভর রয়েছে এবং প্রকৃতিতে পদার্থকে কঠিন, তরল এবং গ্যাসীয়—এই তিনটি অবস্থায় পাওয়া যায়। পদার্থের এরকম তিনটি অবস্থা ছাড়াও তার আরও কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যেমন, ঘনত্ব, দ্রাব্যতা, দৃঢ়তা, নমনীয়তা, তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহিতা, চৌম্বকত্ব ইত্যাদি।

 

ঘনত্ব 


তোমরা এর মধ্যে জেনে গেছ যে একক আয়তনে বস্তুর ভরকে ঘনত্ব বলে। ঘনত্ব বস্তুর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ বিভিন্ন পদার্থের ঘনত্ব বিভিন্ন রকম, কোনোটি বেশি কোনোটি কম। যেমন লোহা, তামা, পিতল এরকম ধাতব পদার্থের ঘনত্ব বেশি, কাঠ বা প্লাস্টিকের ঘনত্ব তার তুলনায় কম এবং বাতাসের ঘনত্ব সবচেয়ে কম।

 

দ্রব্যতা 


পদার্থের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো তার দ্রাব্যতা, যে বিষয়টি সম্পর্কে তোমরা পরের অধ্যায়ে। বিস্তারিত জানতে পারবে। উদাহরণ দেওয়ার জন্য বলা যায়, লবণ পানিতে দ্রবীভূত হয় কিন্তু তেলে সহজে দ্রবীভূত হয় না। আবার নেইল পলিশ পানিতে দ্রবীভূত হয় না কিন্তু এসিটোনে খুব সহজে দ্রবীভূত হয়।

 

দৃঢ়তা ও নমনীয়তা


যখন তুমি বিভিন্ন বস্তুকে হাত দিয়ে চাপ দেবে তখন দেখতে পাবে সেগুলোর মধ্যে কিছু সহজেই সংকুচিত হয়ে আসছে এবং কিছু খুবই শক্ত, যেগুলোকে সহজে সংকুচিত করা যাচ্ছে না। এই সংকোচন ধর্মের মাধমেই আমরা বলি কোনো পদার্থ নরম, কোনোটি শত্রু, কোনোটি নমনীয়, কোনোটি আবার অনমনীয়। নিচের কাজের মাধ্যমে এই বিষয়টি আরও সহজে বুঝতে পারবে:

তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহিতা

তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবহণ পদার্থের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম। যে সকল পদার্থে তাপ সহজে পরিবহণ করা যায় তাদেরকে তাপ পরিবাহী পদার্থ এবং যে সকল পদার্থে ভাগ সহজে পরিবহণ করা যায় না। তাদেরকে তাপ অপরিবাহী পদার্থ বলা হয়। একইভাবে যেসব পদার্থে বিদ্যুৎ সহজে পরিবহণ করা যায় তাদেরকে বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থ এবং যে সকল পদার্থে বিদ্যুত সহজে পরিবহণ করা যায় না সেগুলোকে বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থ বলা হয়। সোনা, রূপা, তামা কিংবা অ্যালুমিনিয়াম একই সঙ্গে তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থের উদাহরণ।

 

চৌম্বকতা 

তোমরা সবাই নিশ্চয়ই চুম্বক দেখেছ, না হয় ব্যবহার করেছ। কিছু কিছু পদার্থের চৌম্বকত্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেগুলো অন্য চৌম্বকীয় পদার্থকে আকর্ষণ কিংবা বিকর্ষণ করতে পারে। লোহা, নিকেল কিংবা কোবাল্ট হচ্ছে চৌম্বকীয় পদার্থের উদাহরণ।

 

বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে পদার্থ শনাক্তকরণ

যেহেতু বিভিন্ন পদার্থের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে তাই সেগুলো ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন পদার্থকে শনাক্ত করতে পারি। যেমন কোনো পদার্থ চুম্বক দ্বারা আকর্ষিত হলে আমরা বলতে পারব সেটি নিশ্চয়ই একটি চৌম্বকীয় পদার্থ। যদি সেটি তাপ এবং বিদ্যুৎ পরিবাহিত করে সেটি সম্ভবত একধরনের ধাতব পদার্থ। যদি নির্দিষ্ট কোনো ধরনের তরলে দ্রবীভূত হয়, তাহলেও আমরা পদার্থটি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারব। পদার্থের ঘনত্বও আমাদেরকে পদার্থ শনাক্ত করার ব্যাপারে সাহায্য করে।

 

পদার্থের বৈশিষ্ট্য জানার মাধ্যমে সঠিক কাজে সঠিক জিনিস ব্যবহার

তুমি যদি বাড়িঘর বানাতে চাও তাহলে ইট, পাথর আর লোহার দরকার হয়; যদি নৌকা বানাতে চাও, তাহলে কাঠের প্রয়োজন হবে। আবার আলুমিনিয়াম তাপ পরিবাহী এবং সহজলভ্য বলে রান্নার কাজে আলুমিনিয়ামের হাঁড়ি-পাতিল ব্যবহার করা হয়। বিদ্যুৎ পরিবহণের জন্য আমরা বিদ্যুৎ পরিবাহী তামার তার ব্যবহার করি। আবার বই ছাপানোর জন্য কাগজ কিংবা শিশুদের খেলনা তৈরি করার জন্য ব্যাপকভাবে হালকা কিন্তু টেকসই প্লাস্টিক ব্যবহার করি। এভাবে দেখা যায় প্রতিটি জিনিসেরই নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্য জানার মাধ্যমে তাদেরকে সঠিক কাজে ব্যবহার করা যায়।

 

ধাতু ও অধাতু

আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে সেগুলো কিছু মৌলিক পদার্থ দিয়ে তৈরি। এই মৌলিক পদার্থগুলোর সবগুলোকেই ধাতু অথবা অধাতুতে ভাগ করা যায়। সুতরাং ধাতু এবং অধাতু সম্পর্কে জানা এবং এগুলোর মধ্যে পার্থক্য করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন তোমরা ধাতু এবং অধাতুর কিছু ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারবে।

 

ধাতুসমূহের ভৌতধর্ম

ধাতুগুলো সাধারণত উচ্চ ঘনত্বের, চকচকে এবং তাপ ও বিদ্যুৎ সুপরিবাহী হয়ে থাকে। পারদ ব্যতিক্রমী তরল পদার্থ, অন্য সকল ধাতু কঠিন পদার্থ। সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম নরম এবং চাকু দিয়ে কাটা যায়, এছাড়া অন্য সকল ধাতু শক্ত। ধাতু ঘাতসহ এবং নমনীয় বলে সেগুলোকে চাপ দিয়ে পাত কিংবা টেনে লম্বা তারে পরিণত করা যায়। সোনা, রূপা, তামা কিংবা অ্যালুমিনিয়াম কয়েকটি পরিচিত ধাতুর উদাহরণ।

 

অধাতুসমূহের ভৌতধর্ম

অধাতুগুলো ধাতুর মতো ভৌতধর্ম প্রদর্শন করে না। যেমন, এগুলো চকচক করে না, সাধারণত তাপ ও বিদ্যুৎ অপরিবাহী, এবং ভঙ্গুর বলে ঘাতসহ প্রসারণশীল নয় তাই চাপ দিয়ে পাত কিংবা টেনে লম্বা তার তৈরি করা যায় না। এগুলোর ঘনত্ব কম, এবং নাইট্রোজেন বা অক্সিজেনের মতো অনেক অধাতু সাধারণ তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায়। পাওয়া যায়। কার্বন কয়লা) আমাদের পরিচিত একটি অধাতু।

 

ধাতুর বিভিন্ন ধর্ম ও তার পরীক্ষা

চকচকে ভাব

কাজ: আলুমিনিয়ামের পাত্র, প্লাস্টিকের তেল কাঠের খেল এবং ইস্পাতের কেন নাও। এগুলোকে সূর্যালোকে রেখে দাও। তারপর লক্ষ করে দেখো কোনগুলো চকচক করে এবং কোনগুলো করে না। পর্যবেক্ষণ থেকে প্রাপ্ত ফলাফলগুলো একটি ছকে দেখ।

 

তাপ পরিবাহিতা

তাপ পরিবাহিতা বলতে কোনো পদার্থের মধ্য দিয়ে অথবা সংস্পর্শে থাকা দুটি ভিন্ন বস্তুর মধ্যে তাপের আদান-প্রদান ঘটাকে বোঝায়। তাপ সব সময় বেশি তাপমাত্রা থেকে কম তাপমাত্রায় পরিবাহিত হয়। এই পরিবহণের জন্য যদি সুপরিবাহী পদার্থ ব্যবহার করা হয়, তাহলে তাপ তাড়াতাড়ি প্রবাহিত হবে। যদি তাপ অপরিবাহী পদার্থ ব্যবহার করা হয়, তাহলে তাপের প্রবাহ হবে ধীরে ধীরে। অধাতুর তুলনায় ধাতুগুলো সাধারণত তাপ সুপরিবাহী, সেজন্য সেগুলো তাপ পরিবহণে খুবই কার্যকর। ধাতুগুলোর তাপ পরিবাহিতার প্রমাণ হিসেবে তুমি নিচের পরীক্ষাটি করে দেখতে পারো

 

তাপ পরিবাহী হিসেবে ধাতুর ব্যবহার

 

ক), রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, সোলার প্যানেল এগুলোতে তাপের পরিবহণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই ন এই ধরনের যন্ত্রে নানা ধরনের তাপ সুপরিবাহী ধাতু ব্যবহার করা হয়।

খ) ইলেকট্রনিকস, প্রকৌশলে, ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা যন্ত্র, গৃহস্থালির যন্ত্রপাতি এ ধরনের শিল্প এবং বিশেষ করে নির্মাণশিল্পে ধাতু ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।

কাজ: ভিন্ন পদার্থের তাপ পরিবাহিতা যে ভিন্ন নিচের পরীক্ষাটি দিয়ে তুমি সেটি পরীক্ষা করে দেখাতে পারো।

প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি: মোটামুটি একই আকারের একটি কাঠের চামচ, একটি প্লাস্টিকের চামচ একটি ধাতব চামচ, ৩টি এত টাকার কয়েন, পানি গরম করার জন্য একটি পাত্র, এক মাস পানি, জাপ দিয়াশলাই এবং সময় মাপার জন্য যে কোনো একটি মড়ি।কার্যপদ্ধতি; সামান্য তাপ দিয়ে মোম নরম। করে। সবগুলা নিচের তলে সমানা পরিমাণে নরম মোম লাগাও। এখন কয়েনগুলো চামচের ওপর মোমের গায়ে এখনভাবে চাপ দিয়ে বলাও কাতে কয়েনগুলো মোমের আরো লেখে থাকে। এবার চামগুলো এমনভাবে পাতা ডুবাও যেন কারান অংশের বাইরে থাকে। তারপর (মোমবাতি বা অন্য কিছু নিয়ে পারটিতে তাপ দিতে থাকো।

চামচের সঙ্গে আটকে থাকা কারনগুলোর অবস্থা এবার পর্যবেক্ষণ করো। কয়েনগুলো বি আলাদা হয়ে গেছে। যদি তাই হয়। হারে কোনটি প্রথমে আলাদা হয়েছে। আলাদা হতে কত সময় নিয়েছে। অন্যগুলো আলাদা হতে কত বেশি সময় নিয়েছে? নিঃসন্দেহে দেখবে এতকা চামচ থেকে প্রথমে কায়েনাটি আজানা হয়েছে। যেহেতু রতন চামচ থেকে প্রথমে আলাদা হয়ে গেছে, তার অর্থ বাতন চামচটি বাকি দুটি (কাঠ এবং প্লাস্টিক) থেকে বেশি তাপ পরিবাহী।

গরম পানি থেকে ভাপ পরিবাহিত হয়ে ধাতব চানচের মেয়ে কাঠ বা প্লাস্টিকের চামচেনা চেয়ে দ্রুত পৌঁছেছে। সে কারণে ধাতব চামতের মোম দ্রুত গলে গিয়েছে এবং কয়েনটি আলাদা হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, প্লাস্টিকের পরিবাহিতা অনগুলোর চেয়ে কম হয়, তা খুব ধীরে ধীরে। প্রান্ত থেকে শীত প্রান্তে পৌঁছেছে। যার ফলে দেখবে প্লাস্টিকের চামচের মা সবচেয়ে বেশি সময় লেগেছে এবং সবার শেষে এ চামচের কয়েনটি আগাম হয়েছে।

 

ধাতু ও অধাতুর বিদ্যুৎ পরিবাহিতা

প্রায় সব ধাতুই বিদ্যুৎ পরিবাহী হলেও সেগুলোর পরিবহণ ক্ষমতা আলাদা। উদাহরণ দেওয়ার জন্য বলা যায়, রূপা সবচেয়ে ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থ এবং তামা ও অ্যালুমিনিয়ামও যথেষ্ট ভালো মানের পরিবাহী। তবে রূপার মূল্য খুব বেশি হওয়ায় বৈদ্যুতিক তার হিসেবে সেটি ব্যবহৃত হয় না, তার পরিবর্তে তামা ও অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহৃত হয়।

কাজ: আমরা খুব সহজেই বিভিন্ন পদার্থের বিদ্যুৎ পরিবাহিতা পরীক্ষা করতে পারি। সেটি করার জন্য তোমার দরকার হবে একটি ব্যাটারি কিছু তামার তার এবং একটি ভায়োক। (তুমি ইচ্ছা করলে ডায়োডের বদলে একটি 6 লাইটের বারও ব্যবহার করতে পারো, কিন্তু আজকাল নানা রংরোর ভায়োত খুবই সহজে অমূলো পাওয়া যায়।। এবারে ছবিতে দেখানো উপায়ে তুমি সার্কিট তৈরি করে ডায়োডটি ব্যাটারির সঙ্গে সংযুক্ত করে সেটি জ্বালাও। তুমি দেখবে ভায়োডের ভেতর দিনো শুধু একদিকে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় বলে ব্যাটারির এর দিকে সংযুক্ত করলে ডায়োড়টি জ্বলবে, অন্যদিকে সংযুক্ত করলে ফুলবে না।

যেহেতু আমা বৈদ্যুতিক পরিবাহী, তাই এটি ব্যাটারির বিদ্যুৎকে ভায়োজের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত করতে পারে এবং এই কারণে ভারোত জ্বলে উঠে। যদি তামার তারটি বৈদ্যুতিক পরিবাহী না হতো তাহলে এটি বিদ্যুৎ সঞ্চালন করতে পারত না এবং ডায়োড জ্বলে উঠে । এবারে তুমি ছবিতে দেখানো উপনরা ভাষার আলো আশটুকুতে লোজ, আলুমিনিয়াম, সুতা, কাগজ, নবার, কাস্টিক, কাঠ এমন কী পানি দিয়েও পরীক্ষা করে দেখতে পারো কী দেখবে কোথাও কোথাও ভালোও হল কোথাও কোথাও না। যদি কোনো একটি নির্দিষ্ট বস্তু দিয়া সার্কিট সম্পূর্ণ করার পরেও ভারোর না হলে, তাহলে বুঝাতে হবে সেই বস্তুটি বিদ্যুৎ পরিবাহী না। 

 

বলপ্রয়োগে ধাতুর পরিবর্তন

তোমরা নিশ্চয়ই তোমাদের স্কুলের ঘন্টার ঢং ঢং শব্দ শুনেছ। স্কুলের ধাতব ঘন্টার জায়গায় যদি একটা প্লাস্টিক কিংবা কাঠের ঘণ্টা ঝোলানো হতো তাহলে নিশ্চয়ই তুমি চমৎকার ঢং ঢং ঘণ্টা শুনতে পেতে না।

আঘাত করা হলে এই বিশেষ ঢং ঢং বা ঝন ঝন শব্দ তৈরি করা ধাতুর একটি ধর্ম। ধাতুকে আঘাত করে পাত তৈরি করা যায়। তুমি শুনে নিশ্চয়ই অবাক হয়ে যাবে যে এক সেন্টিমিটার ঘন কিউবের এক টুকরা সোনাকে একটা ফুটবল মাঠের সমান অতি সূক্ষ্ম পাতে বিস্তৃত করা যায়। তোমাদের রান্নাঘরে গিয়ে পুরনো অ্যালুমিনিয়ামের ডেকচি কিংবা কেতলি পরীক্ষা করে দেখলে দেখবে এটি নানা জায়গায় তোবড়ানো এবং এবড়ো থেবড়ো। তার কারণ ব্যবহারের সময় আঘাত পেয়ে এর আকারের পরিবর্তন হয়েছে। ধাতুর জন্য এটি খুবই সাধারণ একটি প্রক্রিয়া। ধাতু না হয়ে যদি ডেকচি কিংবা কেতলি কাচ অথবা চিনামাটির তৈরি হতো তাহলে এটি ঘটত না। তোমরা কি তোমাদের চারপাশে যা দেখো তার ভেতর থেকে আঘাত পেয়ে অথবা বল প্রয়োগ করে ধাতুর আকার পরিবর্তনের আরও কিছু উদাহরণ বের করতে পারবে?

 

গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক

যে তাপমাত্রায় কোনো কঠিন পদার্থ তার অবস্থা পরিবর্তন করে তরল পদার্থে পরিণত হয়, সেই তাপমাত্রাকে ওই কঠিন পদার্থের গলনাঙ্ক বলে। আবার যে তাপমাত্রায় একটি তরল পদার্থ তার অবস্থা পরিবর্তন করে কঠিন পদার্থে পরিণত হয় তাকে হিমাঙ্ক বলে। প্রকৃতপক্ষে গলনাঙ্ক এবং হিমাঙ্ক আসলে একই তাপমাত্রা। উদাহরণ দেওয়ার জন্য বলা যায় পানির তাপমাত্রা কমাতে কমাতে যখন ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়, তখন সেটি জমে বরফ হতে শুরু করে। আবার জমাট বাধা বরফের তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে যখন সেটি যখন ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়, তখন সেটি গলে পানি হতে শুরু করে।

মোমের গলনাঙ্ক ৫৭°C। তুমি কিভাবে সেটি বের করবে? অথবা এটা দিয়ে কী বোঝায়? এটি বের করতে হলে তাপমাত্রা মাপার জন্য একটি থার্মোমিটার প্রয়োজন। যেহেতু জ্বর মাপার থার্মোমিটার শুধু তোমার শরীরের তাপমাত্রার কাছাকাছি তাপমাত্রা মাপতে পারে, কাজেই তোমাকে ০ ডিগ্রি থেকে ১০০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা মাপতে পারে সেরকম একটি থার্মোমিটার প্রয়োজন। এ ব্যাপারে তোমার শিক্ষক তোমাকে সাহায্য করতে পারেন এবং স্কুলের ল্যাবরেটরিতে তোমাদের পরীক্ষাটি করে দেখাতে পারেন। যেহেতু গলনাঙ্ক এবং হিমাঙ্ক একই তাপমাত্রা কাজেই এই পরীক্ষায় একই সঙ্গে গলনাঙ্ক এবং হিমাঙ্ক বের করা হবে। যদি দুটির মধ্যে একটু খানি পার্থক্য পাওয়া যায় তাহলে সেগুলোর গড় নিলে প্রকৃত তাপমাত্রার কাছাকাছি ফলাফল পাওয়া যাবে।

কাজ 

১। একটি টেস্টটিউবে কিছু মোমের ছোট টুকরো নাও।

২। একটি বিকারে বা অন্য কোনো পাতে খানিকটা পানি নাও এবং তারজানি ব্যবহার করে থাকে ছবিতে যেভাবে দেখানো হয়েছে সেভাবে স্পিরিট ল্যাম্পের বা ভাগ দেওয়ার উপযোগী অন্য কিছুর ওপরে বসা।

৩। একটি দণ্ডের সাহায্যে মোমসহ টেস্টটিউবটি পানিতে নিমজ্জিত কারো এবং একটি থার্মোমিটার টেস্ট টিউবে প্রবেশ করাও

৪। স্পিরিট ল্যাম্পের সাহায্যে বিকারের তলদেশে ভাগ।

৫। থার্মোমিটারের পাঠ পর্যবেক্ষণ করে এ টেস্টটিউবে থাকা মোমের অবস্থার পরিবর্তন লক্ষ করো।তুমি দেখবে যে থার্মোমিটারের ভাপমাত্রার পাঠ বৃদ্ধি পাচ্ছে। থার্মোমিটারের সিয়ানের তাছাকাছি পৌঁছালে রোমের অবস্থা সাবধানতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করো । 

৬। মোম যখন পেতে শুরু করবে, থার্মোমিটারের লক্ষ করো। এটি মোমের গলনাঙ্ক এবং এর মান ৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি হওয়ার কথা। তবে মনে রাখো, বস্তুর মধ্যে যে অপৰা থাকে তার উপর নির্ভর করে একটু বেশি কিংবা কম হতে পারে।

৭।  পুরো মোমটি গলে যাওয়ার পর গলিত মোরে তাপমাত্রা আবার বাড়তে শুরু করবে। 

৮। থার্মোমিটারসহ টেস্টটিউবটির নিচ থেকে বিকার, তারজালি এবং ল্যাম্প সরিতে নাও।।

৯। এবারে গণিত মোমের তাপমাত্রা কমতে থাকবে। থার্মোমিটারের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করো, লক্ষ্য করো কোন তাপমাত্রার মোম জমাট বাধতে শুরু করেছে।

১০। যে তাপমাত্রা মোম জমতে শুরু করবে, সেটি হচ্ছে মোমের হিম। আলাদা আলাদাভাবে বের করা এবং হিমাঙ্কের গড় নিয়ে তোমার ফলাফলটি নিরধারণ করো। 

 

স্ফুটনাঙ্ক

যে তাপমাত্রায় একটি তরল তার অবস্থার পরিবর্তন করে গ্যাসে পরিণত হয় তাকে ফুটনাঙ্ক বলে। তোমরা নিশ্চয়ই রান্নাঘরে কেতলিতে বা অন্য কোনো পাত্রে পানি ফুটাতে দেখেছ, তখন পানি বাষ্পে পরিণত হতে থাকে। যে তাপমাত্রায় পানি বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করে বা ফুটতে শুরু করে সেই তাপমাত্রাকে পানির বাষ্পীকরণ বিন্দু বা স্ফুটনাঙ্ক বলে। পানির স্ফুটনাঙ্ক হলো ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পানির মতোই প্রতিটি তরল পদার্থেরই একটি নির্দিষ্ট স্ফুটনাঙ্ক রয়েছে।

তোমাদের শিক্ষকের সাহায্য নিয়ে গলনাঙ্ক বের করার মতো তোমরা পানির স্ফুটনাঙ্কও বের করতে পারবে।

 

কাজ 

১।  ছবিতে সেরকম দেখানো হয়েছে সেভাবে একটি বিভার বা পানের অর্ধেকের মতো পানি

২। বিকার বা পাত্রটিকে স্পিরিট ল্যাম্পের বা ভাগ দেওয়া যায় এমন কিছুর ওপর বনাও থার্মোমিটার একটা র সাহায্যে নিকারের পানিতে নিমজ্জিত কারো।

৩। এখন তাপ প্রদান করো এবং থার্মোমিটারের তাপমাত্র লক্ষ করতে থাকো।

৪। থার্মোমিটারের তাপমাত্রা যখন ৯৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠবে তখন নির অবস্থা সাবধানতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে থাকো। প্রথমে পানিতে দ্রবীভূত বাতাস বুদবুদ আকারে বের হয়ে আসারে, দেখালো বা নয়।

 ৫। পানি যখন ফুটতে শুরু করবে, তখন থার্মোমিটারের অপমাত্রা লক্ষ করো। এটিই হচ্ছে পানির স্ফুটনাম। তুমি যদি বিশুদ্ধ পানি নিয়ে থাকো, তাহলে ফুটনা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছকছি হবে।

৬। পানিতে ঘন কিছু দ্রবীভূত থাকলে তার স্ফুটনাঙ্ক ভিন্ন হতে পারে, সেটি পরীক্ষা করার জন্য পানিতে এক চামচ লবণ গুলে পানির স্ফুটনায় বের করে দেখো সেটি কত হয়।

তরলের স্ফুটনাঙ্ক আসলে বাতাসের চাপের ওপর নির্ভর করে। উঁচু স্থানে বাতাসের চাপ কম বলে সেখানে পানি কম তাপমাত্রায় ফুটতে থাকে তাই রান্না করতে বেশি সময় নেয়। আবার প্রেশার কুকারে কৃত্রিমভাবে বাতাসের চাপ বাড়িয়ে পানির স্ফুটনাঙ্ক বাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে দ্রুত রান্না করা সম্ভব হয়।

 

অনুশীলনী 

১। রান্নাঘরের বিভিন্ন আকৃতির পাত্র কোনটা কোন রান্নায় কাজে লাগে লক্ষ করে দেখো তো! এদের আকৃতি ভিন্ন হবার কারণ কী বলতে পারো?

 ২। শীতকালে নারিকেল তেল জমে শক্ত হয়ে যায় কেন বলো তো?

Content added By